পুজোর সময় বাঙালি কী চায়? ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখা, লাইন দিয়ে রেস্তরাঁয় খাওয়া, দেদার আড্ডা দেওয়া। আর যদি এমন একটা ছবি বাজারে আসে যা সপরিবারে হইহই করে দেখা যায়, তা হলে তো হয়েই গেল— পুজো ভাল কাটবেই! বাঙালির সেই চাহিদা পূরণ করতেই পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার হাজির হয়েছেন তাঁর ‘সোনাদা’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির তৃতীয় ছবি ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ নিয়ে। সোনাদা-আবির-ঝিনুক এ বার পৌঁছে গেল রোহিতাশ্বগড়। রাজা শশাঙ্কের হারিয়ে যাওয়া গুপ্তধনের সন্ধানে শুরু হল তাদের নতুন অভিযান।
ইতিহাসের অধ্যাপক তথা গুপ্তধনের খোঁজে পারদর্শী সুবর্ণ সেন বা ‘সোনাদা’ (আবীর চট্টোপাধ্যায়) এমনিতেই সব কঠিন সঙ্কেতের সমাধান নিমেষে করে ফেলতে পারে। এতটাই যে তাকে এক মুহূর্তের জন্যেও কিছু ভাবতে হয় না। সে ঠিক জানে, কী ভাবে কী করলে কোনও গুপ্ত দরজা খুলে যেতে পারে আর বেরিয়ে আসতে পারে লুকনো ধনসম্পদ! তাই তার পক্ষে বক্স অফিসের গুপ্তধনটাও বোধহয় সহজে পেয়ে যাওয়া সম্ভব। কারণ, তাকে সঙ্গ দিচ্ছে বিভিন্ন ছোট ছোট সহজ সঙ্কেত। অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির মতো সোনাদার গল্পগুলোর ভিত সাহিত্য নয়। তাই গল্প নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার বিস্তর সুযোগ রয়েছে। যদিও সব অভিযানই যদি গুপ্তধনের সন্ধানে হয়, তা হলে খানিকটা এক রকম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বৈকি। এ ছবির চিত্রনাট্যের পরতে পরতে তাই ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধংসস্তূপে যাওয়া, কোনও বিশেষ জায়গায় জেনে বা না-জেনে চাপ পড়ে যাওয়া এবং গোপন কোনও দরজা খুলে যাওয়া! বড় পর্দায় এই ধরনের ‘স্পেক্টাক্ল’ অবশ্য দেখতে মন্দ লাগবে না দর্শকের। বিশেষ করে ছোটদের বিস্ময়কর চোখে তো এ সবই উপভোগ্য। আর ইন্ডিয়ানা জোন্স যদি প্রত্যেক ছবিতে ইতিহাস ধাওয়া করে কামাল দেখাতে পারে, আমাদের সোনাদাই বা কেন পারবে না!
দু’টো ছবির পর সোনাদার চরিত্রের সঙ্গে আবীর সহজেই মিলেমিশে গিয়েছেন। ব্যোমকেশের ধুতি-পাঞ্জাবিতে তিনি যতটা স্বচ্ছন্দ, ততটাই কেতাদুরস্ত জ্যাকেট-ট্রাউজ়ার-গগল্সে। এখনকার প্রজন্মের মধ্যে ইতিহাস নিয়ে কতটা উৎসাহ রয়েছে জানা নেই, তবে সুবর্ণ সেনের মতো স্মার্ট অধ্যাপক পেলে নতুন করে উৎসাহ জাগতেই পারে। আবীরের কথা বলা, অভিব্যক্তি, শরীরী ভাষা— সবেতেই যে সততা ফুটে ওঠে, তাতে সোনাদার দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে অসুবিধা হয় না। বাংলার ইতিহাসের রোমাঞ্চকর কাহিনি, আবির (অর্জুন চক্রবর্তী)-ঝিনুকের (ইশা সাহা) মজাদার রসায়ন, বেড়াতে যাওয়ার স্বাদ, মনে ফূর্তি আনা কিছু গান, সপরিবারে বসে ঘন ঘন পাত পেড়ে খাওয়া, দুষ্টু ভিলেন, হাসির ভিলেন, অপহরণ, কার চেজ, ধাঁধার সমাধানে বুদ্ধির খেলা, নায়কের গোপন প্রেমের আভাস, একাধিক স্থান পরিবর্তন— সবই যখন মুচমুচে মোড়কে সাজানো হবে, খাপে খাপে বসবে প্রতিটা সঙ্কেত, তখন বক্স অফিসের গুপ্তধন তো হাতের মুঠোয় আসবেই।