‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে’, মায়ের আবাহন বার্তা ঘোষিত হল দিকে দিগন্তরে। বাঙালির কাছে মহালয়ার ভোর এভাবেই আসে। এটাই বাঙালির চিরকালের অভ্যেস। সেই অমোঘ কণ্ঠস্বরের অধিকারী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আকাশবাণীর ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’ এবং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্তোত্রপাঠ বাঙালির মাতৃ আরাধনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাক-স্বাধীনতা পর্বে- ১৯৩২-এ ষষ্ঠীর ভোরে সম্প্রচার হয় ‘মহিষাসুরমর্দ্দিনী’। প্রণয়নে বাণীকুমার। সুর সংযোজনায় পঙ্কজ কুমার মল্লিক। গ্রন্থনা ও চণ্ডীপাঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সেই সূচনা। এরপর শুধুমাত্র ১৯৭৬ সাল বাদে আজও একই ধারায় আকাশবাণীতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহালয়ার অনুষ্ঠান অমর হয়ে রয়েছে।
২০১৯-এ পরিচালক সৌমিক সেন তৈরি করেছিলেন ‘মহালয়া’ ছবিটি। যেখানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ভূমিকায় অভিনয় করেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছিল তাঁর কাজ। মহালয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই তাঁর স্মৃতিতে ভিড় করে এল নানা ঘটনা।শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন ‘আমার পরম সৌভাগ্য আমি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিলেন আকাশবাণীর জগন্নাথ বসু, সমরেশ ঘোষ, অজিত মুখোপাধ্যায়। শুভাশিস জানালেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণের হাতে সবসময় একটা থলি থাকত। আবার কথা বলতে বলতে তিনি নাকি মজা করে পেটে খোঁচা দিতেন। আকাশবাণীর জন্মলগ্ন থেকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
বেতারে নাটকের পথিকৃৎ বলা যায় তাঁকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষযাত্রার ধারাবিবরণী তাঁরই কন্ঠে আকাশবাণীতে সম্প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধানচন্দ্র রায়, উত্তম কুমারের প্রয়াণযাত্রার ধারাবিবরণীও তাঁরই দেওয়া। ক্রিকেট, ফুটবলের ধারাবিবরণীও প্রথম তিনিই দিয়েছিলেন। বেতারের বাইরে মঞ্চ ও সিনেমায় তাঁর অবদান রয়ে গিয়েছে। এহেন প্রতিভাধর মানুষটি তাঁর জীবদ্দশায় আকাশবাণীও নাকি ভুলে গিয়েছিলে। শেষজীবনে তিনি আকাশবাণীতে এর ওর দরজায় ঘুরে বেড়াতেন শুধুমাত্র একটা কাজের আশায়। অথচ এই আকাশবাণীই তাঁর প্রাণ ছিল। আরও জানা যায় একবার তিনি আকাশবাণীতে এসেছিলেন। গেটে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ঢুকতে বাধা দেয়। তখন তিনি নাকি ভয়ানক রেগে গিয়েছিলেন। চিৎকার করে বলেছিলেন আমি আকাশবাণীর জন্ম দিয়েছি।’ এ ঘটনা সত্যি স্তম্ভিত করে। বস্তুত মহালয়া যতদিন থাকবে ততদিন অমর হয়ে থাকবেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।’