আসাম ভাষাগত সংখ্যালঘু বোর্ড রবীন্দ্র সংগীত এবং রবীন্দ্র নৃত্য পারফরম্যান্স প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল

অসম ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ড, অসম সরকারের দ্বারা রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত রবীন্দ্রসংগীত ও রবীন্দ্রনৃত্যের চূড়ান্ত পর্যায়ের বাছাই প্রক্রিয়া ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান সফলভাবে সমাপ্ত হয়। গত ২৩ জুন, রবিবার গুয়াহাটির মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেব আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন পরিবেশ ও বন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ইত্যাদি বিভাগের মন্ত্রী চন্দ্র মোহন পার্টেটয়ারী, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, পর্যটন ইত্যাদি বিভাগের মন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বরুয়া, নগাঁও-এর বিধায়ক রূপক শর্মা, অসম বিধানসভার উপাধ্যক্ষ ড°নুমল মমিন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড°অমলেন্দু চক্রবর্তী, গুয়াহাটি পৌর নিগমের মেয়র মৃগেন শরণীয়া এবং আরও যথেষ্ট সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তি। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমন্ত্রিত অতিথিরা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। উল্লেখ্য যে, অসমের উনিশটি শহরে রবীন্দ্রসংগীত ও রবীন্দ্রনৃত্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই ঊনিশটি কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে তিন হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছে। এই তিন হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে ২২৮ জন প্রতিযোগী রাজ্য পর্যায়ের প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হয়েছিল। তাদের ‘ক’ শাখা, ‘খ’ শাখা, ও ‘গ’ শাখার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করা সকল প্রতিযোগীকে পুরস্কার বিতরণ ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। স্থানপ্রাপ্তরা হলেন ক্রমে- ‘ক’ শাখায় রবীন্দ্র সংগীতে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন অনন্য চক্রবর্তী (করিমগঞ্জ), দ্বিতীয় দ্বীপলেখা দেবী (বঙ্গাইগাঁও), তৃতীয় হৃদ মল্লিক (ধুবড়ি), ও সান্ত্বনা পুরস্কার লাভ করেছেন দেবাংশী দাস (শিলচর)। ‘খ’ শাখায় রবীন্দ্র সংগীতে প্রথম স্থান সৈকত চক্রবর্তী (গুয়াহাটি), দ্বিতীয় আয়ুশ্রী দাস (নগাঁও), তৃতীয় স্থান লাভ করেন হিমসুমী গোস্বামী (বঙ্গাইগাঁও)। ‘গ’ শাখায় রবীন্দ্র সংগীতে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন অংকিতা মিথেরফাংছা (হাফলং), দ্বিতীয় মৌমিকা দেব (হাইলাকান্দি), তৃতীয় নীলাঞ্জনা মোদক (করিমগঞ্জ)। ‘ক’ শাখায় রবীন্দ্র নৃত্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন সুজল ভট্টাচার্য (হাফলং), দ্বিতীয় ডিগবী শর্মা (বরপেটা রোড), বেদাত্রয়ী গোস্বামীয়ে (হাইলাকান্দি)।

‘খ’ শাখায় রবীন্দ্র নৃত্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন অন্তরা ভৌমিক (মরিয়নি), দ্বিতীয় দীপান্বিতা দত্ত (হাফলং), তৃতীয় রূপসা বোস (লামডিং)। ‘গ’ শাখায় রবীন্দ্র নৃত্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন তনয় রয় (তেজপুর), দ্বিতীয় দীপাংকর বর্মন (হাফলং), তৃতীয় পাপ্পু সিং (লামডিং) এবং বিউটি বরুয়া। ‘ক’ শাখায় প্রথম স্থান দখল করা শিল্পীকে ১০,০০০ টাকা নগদ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই শাখায় দ্বিতীয় স্থান দখল করা শিল্পীকে নগদ ৭,০০০ টাকা এবং তৃতীয় স্থান দখল করা শিল্পীকে নগদ ৫,০০০ টাকা প্রদান করা হয়। খ’ শাখায় প্রথম স্থান দখল করা শিল্পীকে ১৫,০০০ টাকা নগদ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই শাখায় দ্বিতীয় স্থান দখল করা শিল্পীকে নগদ ১২,০০০ টাকা এবং তৃতীয় স্থান দখল করা শিল্পীকে নগদ ১০,০০০ টাকা প্রদান করা হয়। ‘গ’ শাখায় প্রথম স্থান দখল করা শিল্পীকে ২১,০০০ টাকা নগদ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই শাখায় দ্বিতীয় স্থান দখল করা শিল্পীকে নগদ ১৮,০০০ টাকা এবং তৃতীয় স্থান দখল করা শিল্পীকে নগদ ১৫,০০০ টাকা প্রদান করা হয়।

পুরস্কাৰ বিতরণে পরই একটি আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়, যেখানে মুখ্য আকর্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সত্রীয়া নৃত্যশিল্পী অনীতা শর্মা, সংগীত শিল্পী রূপম ভূঁইয়া, মৌসুমী শহরিয়া, ভাস্বতী ভারতী, নৃত্যশিল্পী অত্রেয়ী চক্রবর্তী প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সূচনায় অসম ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের অধ্যক্ষ শিলাদিত্য দেব বলেন যে, “রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে জয় লাভ করা সকল প্রতিযোগীকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমাদের এই অনুষ্ঠানের দুটি বছর পূর্ণ হল, এই দুটি বছরে আমরা সর্বসাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পেয়েছি। আমরা চেষ্টা করব রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখার। এধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই মহান কবিকে অমর করে রাখব।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পর্যটনমন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বরুয়া বলেন “এমন একজন মহান ব্যক্তির স্মৃতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি খুবই খুশি হয়েছি। এরাজ্যে ভাষাকে কেন্দ্র করে অনেক হিংসার ঘটনা ঘটেছে, এর কুফলও অসমবাসীকে ভুগতে হয়েছে। ভাষার ভিত্তিতে এরাজ্য বিভক্ত হয়েছে। বর্তমান সকল ভাষার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে না পারলে অসম আবারও বিভক্ত হতে পারে। সেজন্যই সকল ভাষার মধ্যে রাজ্য সরকার সমন্বয় গড়ে তুলতে চায়।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারী সকলকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান। তদুপরি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিযোগীকে উৎসাহ প্রদান করে বলেন, বাংলা সাহিত্যের এনে একজন বিদগ্ধ পণ্ডিতের স্মৃতিতে অনুষ্ঠিত করা এই অনুষ্ঠানে বাঙালি সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিশেষ করে অসমের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে মাদকতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সমন্বয়ের উদাহরণও তুলে ধরেছেন। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের রাজ্য কমিটির সদস্য সুশান্ত বিশ্বাস, উপাধ্যক্ষ অসম ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন পরিষদ, অসম সরকার, ড. সৌমেন ভারতীয়া, ড. শান্তনু সান্যাল, রঙ্গদুলাল দে, মিতা সেন, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, সুজিত সরকার প্রমুখ সদস্যবৃন্দ। ড° সৌমেন ভারতীয়া বলেন, “এই ধরনের অনুষ্ঠান প্রতি বছর আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করার জন্য আমরা সব রকম প্রচেষ্টা চালাব। বাঙালিরা ছাড়াও অসমের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিযোগীরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করায় অসমের সকল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য, সম্প্রীতি ও সমন্বয় গড়ে তোলার এক বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।” অসমের ঊনিশটি শহরের প্রতিযোগী এবং অভিভাবকদের পাশাপাশি গুয়াহাটির স্থানীয় জনতা বিপুলভাবে সাড়া দেওয়ায় অনুষ্ঠানটি সফল হয়। আগামী বছর এই রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানটি ২৫শে বৈশাখে পালন করা হবে বলে আয়োজকরা জানান।

By Business Bureau