নিভে গেল সন্ধ্যা বাতি৷ বসন্ত সন্ধ্যায় নিভল ‘সন্ধ্যা’ প্রদীপ৷ প্রয়াত গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পী৷ বুধবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তাঁর৷ তার আগে রবীন্দ্রসদনে শায়িত রাখা হয়েছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মরদেহ৷ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি থেকে রবীন্দ্রসদনে পৌঁছয় গীতশ্রীর পার্থিব শরীর। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এখানেই শায়িত রাখা হয়েছিল তাঁর মরদেহ৷ গীতশ্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে পৌঁছেছিল বিশিষ্টজনেরা। এখানে এসে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁর গুণমুগ্ধরাও৷ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে সম্পন্ন হয় তাঁর শেষ কৃত্য৷ দেওয়া হয় গান স্যালুট৷
রবীন্দ্রসদন জুড়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান৷ গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সুরের জগতে অগণিত গান উপহার দিয়েছেন তিনি৷ সেই গানেই আজ ভেসে যায় রবীন্দ্র সদন চত্বর৷ ভারক্রান্ত মনে তাঁকে শেষ সম্মান জানাতে আসেন বিশিষ্টজন থেকে সাধারণ মানুষ৷ উপস্থিত ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ মালা রায়৷ একে একে গীতশ্রীকে শেষ সম্মান জানাতে আসেন সঙ্গীত ও সংস্কৃতি জগতের বহু মানুষ৷ বিকেল পাঁচটায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানের উদ্দেশে শুরু হয় তাঁর শেষযাত্রা৷
গীতশ্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ উত্তরবঙ্গ সফর মাঝপথে সেরেই কলকাতায় ফিরছেন তিনি৷ ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়-এর মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই কলকাতায় প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজের সফরসূচি কাঁটছাট করেন মমতা। জানিয়ে ছিলেন, বুধবার সরকারি তত্ত্বাবধানেই হবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য।
১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্ম সন্ধ্যার৷ তাঁর বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন রেলের কর্মকর্তা৷ মায়ের নাম হেমপ্রভা দেবী৷ ছয় ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ তিনি৷ পণ্ডিত সন্তোষ কুমার বসু, অধ্যাপক এটি ক্যানন এবং অধ্যাপক চিন্ময় লাহিড়ীর কাছে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন গীতশ্রী। তবে তাঁর গুরু ছিলেন উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান৷ তাঁর পুত্র উস্তাদ মুনাওয়ার আলি খানের ছত্রছায়ায় ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখেছিলেন তিনি৷ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে আধুনিক বাংলা গানের জগতে তাঁর সুরের বিস্তার৷ তাঁর কন্ঠে প্রাণ পেয়েছে অগণিত গান৷ তাঁর ঝুলিতে রয়েছে জাতীয় পুরস্কার৷ ১৯৭১ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ এবং ‘নিশিপদ্ম’ ছবির জন্য এই পুরস্কার পান সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়৷ ২০১১ সালে তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে রাজ্য সরকার৷ প্রায় গোটা জীবন সঙ্গীতের জগতে অতিবাহিত করেছেন তিনি৷