মঞ্চে উদিত নারায়ণ। গাইছেন, ‘টিপ টিপ বরসা পানি।’দর্শকাসনে বসে থাকা ভক্তদের মধ্যে উন্মাদনা তুঙ্গে। অনুষ্ঠানের মাঝে ভক্তদের সঙ্গে সেলফিও তুলছিলেন শিল্পী। সেই ফাঁকে এক মহিলা অনুরাগীর ঠোঁটে চুম্বন করে বসলেন শিল্পী। সেলফি তুলতে গিয়ে চুম্বনে কিছুটা অপ্রস্তুতে পড়েন তরুণী। এই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্যুতের গতিতে ভাইরাল হয়ে যায়। ওই ভিডিও দেখে নেটদুনিয়া এখন দুষছে শিল্পীকে। X হ্যান্ডেলে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে তাজ্জব প্রায় সকলে। এক নেটিজেন লিখেছেন, “এটা উদিত নারায়ণ করেছেন?” আবার কেউ কেউ সন্দেহপ্রকাশ করে লিখেছেন, “সত্যি এটি উদিত নারায়ণ নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে করা হয়েছে?” অনেকে আবার বলছেন, এই প্রথমবার নয়। অলকা ইয়াগনিককেও নাকি এভাবে একবার বিনা অনুমতিতে গালে চুমু দেন উদিত। সে ভিডিও নাকি সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া যাবে।
আটের দশকের শেষে কিশোর কুমারের অকাল প্রয়াণে ভারতীয় সঙ্গীত জগতে তখন বিশাল এক শূন্যতা। সেই সময় আত্মপ্রকাশ হয়েছিল এই বিখ্যাত গায়কের। ১৯৫৫ সালে নেপালে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম। সেখানেই বেড়ে ওঠা। পরে উত্তর বিহারের মিথিলায় চলে আসা। ছেলেবেলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে উদিত বলছেন, ‘আমার কণ্ঠস্বর হয়তো ভগবানের দান কিন্তু জীবনের পথ ছিল আঁকাবাঁকা। বাড়িতে কোনও রেডিও ছিল না। প্রতিবেশীর রেডিও সেট থেকে মহম্মদ রফির গান শুনে মুগ্ধ হয়ে যাই।’ সেই থেকে গানের প্রতি ভালোবাসা। রফি সাহেবের ভক্ত হয়ে ওঠা। ছেলেবেলায় গ্রামে একবার গেয়ে ২৫ পয়সা পেয়েছিলেন। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাঠমান্ডুর আকাশবাণীতে যোগ দিয়েছিলেন উদিত। অল্প কয়েক দিনে বুঝে যান কিছু করতে গেলে মুম্বইয়ে যেতে হবে।
বাইশ বছরে অচেনা শহরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। পুঁজি বলতে শুধু কণ্ঠ। ১৯৮০ সালে উনিশ-বিশ ছবিতে প্রথম সুযোগ। কিন্তু তা একেবারে চলেনি। তবে এই ছবিতে তাঁর স্বপ্নপূরণ হয়। ছেলেবেলার আইডল মহম্মদ রফির সঙ্গে ওই সিনেমায় গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন উদিত। ১৯৮৭ সালে উদিতের সন্তান আদিত্যর জন্ম হয়। সে বছর আনন্দ মিলিন্দের সুরে রিলিজ হয় ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’। আমির খানের প্রথম ছবিতে উদিতের লিপে ‘পাপা কহতে হ্যায়’ শুনে মোহিত হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। আমিরের ছবি শুরুর দিকে তেমন চলছিল না। তখন ব্যাগ গুছিয়ে বিহারে ফিরে চাষবাস করবেন বলে ঠিক করে ফেলেছিলেন উদিত। তৃতীয় সপ্তাহের পর উদিত বুঝে যান তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার জন্য এসেছেন। এরপর ১৯৯৩-এ ‘পেহলা নাশা’ সুপারহিট হয়েছিল। সব ব্যর্থতা ভুলে যান উদিত। ৩৬টি ভাষায় ২৫ হাজারের উপর গান, ১৫০০ ছবিতে লিপ। নামের পাশে পাঁচটা ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ। বিবিসির সেরা ৪০ বলিউড গানের মধ্যে উদিতের রয়েছে ২১টি গান। অমিতাভ বচ্চন থেকে রাজেশ খান্না, দেব আনন্দ বা তিন খান। সবার লিপেই যেন সাবলীল উদিত।