কুয়াশা কেবল পাহাড়ে থাকে না। মানুষের জীবনেও ঘনায়। তখন সেই কুয়াশা কেটে রোদ ওঠার অপেক্ষাতেই দিন কাটে। সিঙ্গল মাদার মায়া ডিস্যুজাও স্বপ্ন দেখেছিল অতীতের কুয়াশা থেকে মুক্তি পেয়ে কিশোরী মেয়ের সঙ্গে একটা সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার। তা গড়ে উঠছিলও। কিন্তু আচমকাই কালিম্পংয়ে হাজির হয় এক আগন্তুক। যার আবির্ভাবে ফের নতুন করে কুয়াশা ঘনায়। একটি মৃত্যু ও তাকে ঘিরে বাড়তে থাকা কুয়াশার ভিতরে দমবন্ধ অবস্থা থেকে কি পরিত্রাণ পাবে মায়া? সেই গল্পই বলে পরিচালক সুজয় ঘোষের ‘জানে জান’। ট্রেলার ঘিরে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। ছবি কি তা পূরণ করতে পারল?
জাপানি উপন্যাস ‘দ্য ডিভোশন অফ সাসপেক্ট X’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘জানে জান’। নেটফ্লিক্সের জন্য তৈরি ছবিটিতে মায়ার ভূমিকায় রয়েছেন করিনা কাপুর খান ।ছবির অন্য দুই প্রধান চরিত্র স্কুল শিক্ষক নরেন (জয়দীপ অহল্বাত) ও পুলিশ অফিসার করণ (বিজয় বর্মা)। বিজয় ও করিনা দুজনেই চমৎকার কাজ করেছেন। ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্রে সৌরভ সচদেবা যথাযথ। কিন্তু সকলের নজর যেন কেড়ে নেন জয়দীপই। স্কুল শিক্ষক অন্তর্মুখী এক মানুষের ভূমিকায় তিনি অনবদ্য। ‘জানে জান’ একটি খুনকে ঘিরেই পাক খায়। ছবির মোটামুটি শুরুর দিকেই সেই খুনটি হয়। তারপর থেকে গল্প গড়ায় সেই খুনকে কেন্দ্র করে। শেষ পর্যন্ত কি অপরাধী বাঁচতে পারে? নাকি ধরা পড়ে যায় পুলিশি তদন্তের প্যাঁচে? সেটুকু উহ্য রাখতেই হবে। কেবল এটা বলা যায়, এই ছবির শেষটা আর পাঁচটা থ্রিলারের মতো নয়। হয়তো কারও কারও হতাশ লাগবে। কিন্তু কেন যেন মনে হয়, ক্লাইম্যাক্সের এই পরিণতিই হয়তো যথার্থ। তাতে নিছক চোর-খুনি খেলাকে অতিক্রম করে যায় কাহিনির অভিমুখ।
কিন্তু তবুও একথা মানতেই হবে সুজয় ঘোষের যে ব্রিলিয়ান্স ‘কাহানি’তে ছিল, তা যেন আর ফিরে আসছে না। ‘অনুকূল’ অবশ্য শর্ট ফিল্ম হিসেবে চমৎকার নির্মাণ ছিল। কিন্তু ‘জানে জান’ তেমন হতে পারেনি। অথচ সম্ভাবনা ছিল। তবে সব মিলিয়ে ছবিটি একবার দেখতে ভালোই লাগে। অ্যাকশন ও সাসপেন্সের মিশেলও সুন্দর। চিত্রনাট্য চরিত্রের বুননে সব ক্ষেত্রে যত্নশীল না হলেও কাহিনি বর্ণনায় মসৃণতা বজায় থাকে আগাগোড়াই। কেবল শেষের জার্কটুকু ছা়ড়া। তবে সেটা হয়তো ছবিটিকে একটা অন্য মাত্রা দেয়।