ছোটপর্দায় লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জীবন নিয়ে নির্মিত ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রে ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। তখনও তিনি মহাপুরুষের জীবন সম্পর্কে সবিস্তার জানতেন না। তাই নিখুঁত ভাবে তিনি লোকনাথ ব্রহ্মচারীকে পর্দায় ফোটাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দ্বন্দ্বে ভুগেছেন! কারণ, চেহারার দিক থেকেও উভয়ের কোনও মিল নেই। যে ভয় পেয়েছিলেন অভিনেতা সেটাই বাস্তব হল। ধারাবাহিক সম্প্রচার হওয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় অভিনেতাকে সমাজমাধ্যমে শুনতে হয়েছে, “লোকনাথ বাবার চরিত্রে ভাস্বরকে একটুও মানায়নি। ওঁকে বাছা মস্ত ভুল।”
এইসব মন্তব্য কানে আসতেই ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেতা। মঙ্গলবার, লোকনাথ বাবার তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে ভাস্বর সংবাদমাধ্যমে জানান, “প্রত্যেক দিন দুরুদুরু বুকে স্টুডিয়োয় পা রাখতাম। আর লোকনাথ বাবাকে ডাকতাম, তোমার পায়ে নিজেকে সঁপে দিলাম। এ বার তুমি রক্ষা করো।” এরপর বাংলাদেশের বারডি গ্রাম থেকে বারডিবাসীদের প্রতিনিধিস্বরূপ এক ব্যক্তি অভিনেতাকে ফোন করে বলেছিলেন, “আপনিই নিখুঁত লোকনাথ ব্রহ্মচারী। চেহারা, অভিনয় সব দিক থেকে।” শুনে আনন্দে চোখে জল এসে গিয়েছিল অভিনেতার।
ধারাবাহিক চলাকালীন ভাস্বর উপলব্ধি করেছিলেন মহাপুরুষের বাণী, “রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যেখানে বিপদে পড়িবে আমাকে স্মরণ করিবে, আমি রক্ষা করিব— কতটা সত্যি। সে সময়ে আত্মসমর্পণ করেছিলাম বলেই টানা অতগুলো দিন ধরে মহাপুরুষের চরিত্রে অভিনয় করতে পেরেছি।” মনে করেন তিনি।
মহাপুরুষের চরিত্রে অভিনয় করতে করতেই ভাস্বর মন থেকে বিশ্বাস করেন তাঁকে। বাড়িতে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছেন। পালন করেন জন্মদিন, তিরোধান দিবস। এই দুটো দিন নিরামিষ খান তিনি। “ধারাবাহিক যে দিন শেষ হল সে দিন চাকলা ধাম থেকে ফোন। আমরা বাবাকে দেখিনি। আপনিই আমাদের কাছে জীবন্ত লোকনাথ ব্রহ্মচারী”, ভাস্বরের গলা আবেগে কাঁপছে। “এখনও ব্রহ্মচারীর বিশেষ দিনে নানা জায়গা থেকে ডাক পাই। ওঁর প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থাকার জন্য। আমি সাড়া দিই না। লোকনাথ ব্রহ্মচারীকে ভাঙিয়ে খাব! সে স্পর্ধাই আমার নেই।”
ধারাবাহিক চলাকালীন অভিনেতা উপলব্ধি করেছিলেন মহাপুরুষের বাণী, “রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যেখানে বিপদে পড়িবে আমাকে স্মরণ করিবে, আমি রক্ষা করিব— কতটা সত্যি। “প্রত্যেক দিন ভাবতাম, আজকেই শেষ। বাড়ি ফিরে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারব না। জ্বর আসা দূরের কথা, একটা হাঁচি পর্যন্ত হয়নি!”
করোনা আবহে মহাপুরুষের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ভাস্বর ত্রাণ বিলি করতেন পথে। কোনো কোনো দিন বিনা সুরক্ষাতেই ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে যেতেন অনেক অপরিচ্ছন্ন এলাকায়। “আমার কিন্তু কোভিড হয়নি! রোজ বাবাকে নিয়ে খুব ভয় পেতাম। আমি হয়তো অজান্তে জীবাণু বহন করছি। বাবার যদি কিছু হয়! কিচ্ছু হয়নি বাবার।”